আলয়অঘোরপন্থী

অঘোরপন্থী

অঘোরপন্থী [অঘোর শিব, ভয়ানক— পন্থী (মূল— পথিন্) চলিত—  অঘোরী। হিন্দি ‘অওঘড়’] বিশেষ্য, শৈবসম্প্রদায়-ভেদ [দ্রষ্টব্য— ইহারা নিতান্ত অপরিস্কার থাকে। আমমাংস, গলিত দুর্গন্ধময় শব এমন কি মলমূত্র পর্য্যন্ত অম্লান বদনে উদরস্থ করিয়া থাকে। কখনও অঙ্গমার্জ্জনা বা মুখ পরিস্কার করে না, মদ্যপান করিবার জন্য প্রত্যেকের হস্তে এক একটী নরকপাল থাকে, পরিধানে কৌপীন ও বহির্বাস। নরবলি দ্বারা পূজা করে। নির্ব্বিকার ও নির্ঘৃণ হওয়াই ইহাদের ধর্ম্মনীতির মূলমন্ত্র— ভারতকোষ। ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ গ্রন্থে অক্ষয়কুমার দত্ত মহাশয় লিখিয়াছেন—”ইহারা মদ্য মাংস ভক্ষণ, সর্পাদির অস্থি ও পশ্বাদির কপাল ধারণ ও অন্যান্য নানাবিধ ঘৃণিত ও কুৎসিত ব্যবহার করে। বিশেষ এই যে, ইহারা যোগী, এইজন্য কন্ফট্—যোগীদের মত কর্ণযুগলের একরূপ দর্শন অর্থাৎ কুণ্ডল পরিয়া থাকে। ইহারা শিবের উপাসক, এ নির্মিত্ত অস্থিমালা ও করোটীমালার সহিত রুদ্রাক্ষমাল্য ও ঠুম্রা ইত্যাদি তীর্থচিহ্ন ধারণ করে। ক্ষৌরী হয় না; কেশ ও শ্মশ্রু রাখিয়া দেয়।” অঘোরী সম্প্রদায়ের আদিস্থান বড়োদারাজ্য। এখানে অঘোরেশ্বর নামে একটি মঠ ছিল, তথায় অঘোর-স্বামী বাস করিতেন। রাজস্থানের অন্তর্গত আবুপর্ব্বত, কাটিয়াবাড়, বঙ্গদেশ ইত্যাদি স্থানে এখনও মধ্যে মধ্যে অঘোরপন্থী যোগী দেখা গেলেও ইহারা ক্রমেই নির্মূল হইয়া আসিতেছে। এই সম্প্রদায় অতি প্রাচীন। ইহাদের বিষয় মার্কোপোলো, প্লিনী, এরিষ্টটল প্রমুখ বৈদেশিকগণ তাদের গ্রন্থে উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন] ২ [অঘোরী যোগীদের মত যাদের ভক্ষ্যাভক্ষ্য বিচার নাই এবং যারা আহার সম্বন্ধে নির্ঘৃণ] বিশেষণ, দুরাচার; উন্মার্গগামী; বিভৎসাচারী।

অঘোরপন্থী বিশেষ্য, বীভৎস আচারে অভ্যস্ত শৈব সম্প্রদায়বিশেষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ

শব্দসূত্র